প্রাণ ও বিবর্তন । আদনান শাহরিয়ার
“বিবর্তন” বিষয়টা খুবই আকর্ষণীয় একটা বিষয় হলেও এইটা বোঝা বেশ দুরূহ ব্যাপার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে Fossilকে উপস্থাপন করা হয়। এইভাবে প্রমাণ বুঝতে সহজ হলেও পুরো বিবর্তন ব্যাপারটা না বোঝার কারণে আর ধর্মীয় কারণে অনেক মানুষ এইটা মেনে নিতে চায় না। আমি এই লেখার মাধ্যমে “বিবর্তন”কে আণবিক পর্যায়ে বোঝানর চেষ্টা করব যতটা সহজে সম্ভব। আর আমি ধরে নিচ্ছি পাঠকরা অণু পরমাণু নিয়ে ভালো ধারণা রাখেন।
আশেপাশে সবকিছু দেখে শুনে আমরা যা বুঝতে পারি তা হোল, মানুষ, মুরগি, গরু, ছাগল, কুকুর ইত্যাদি সবার মধ্যেই মগজ আছে, হাড় আছে, পেশী আছে, ফুসফুস আছে, পাকস্থলী আছে ইত্যাদি আরও অনেক কিছুই আছে যা একইরকম কাজ করে আর এগুলা ছোট বড় যাই হোক একই রকম প্রায়। একটু দূরে গেলে, টিকটিকি, কুমির, ব্যাঙ এদেরও একই জিনিসগুলা আছে, কিন্তু পার্থক্য একটু বেশি। আবার খুব বেশিও না, যেমন সবার ঠিক ৪টাই পা আছে। আরও দূরে গেলে মাছ বা পাখি আছে। এদের পার্থক্য আরও বেশি। আবার পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ বিবেচনায় আনলে পার্থক্য আরও অনেক বেশি। তবে পার্থক্য যতই থাকুক, এই সবাইকে একই জাতে ফেললে যা হয় তা হল “প্রাণী”।
আবার এসবের বাইরেও, আছে এমন সব প্রাণ, যাদের খালি চোখে দেখা যায় না। যেমন ব্যাকটেরিয়া, অ্যামিবা ইত্যাদি। এসব সকল প্রাণকে একটা ছবিতে নিচের মত দেখান যায়।
আমরা মানুষ, গরু, সাপ, ব্যাঙ, মাছ, পোকামাকড় ইত্যাদি সব Animals এর মাঝে পরে, আর গাছ পড়ে Plants এর মধ্যে। এই animals আর plants হচ্ছে অনেক ধরণের “প্রাণ”এর মধ্যে ২টা ধরন মাত্র। যাই হোক, এখন এত সব প্রাণ দেখে কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় আসা উচিত।
১। প্রাণী বা উদ্ভিদ যাই হোক, প্রাণ কি জিনিস?
২। প্রাণ কিভাবে প্রাণের মত এত কাজ করে?
৩। এদের মধ্যে পার্থক্যটা কি?
৪। পার্থক্য কি বিবর্তনের জন্যই?এসব প্রশ্নের উত্তর একের পর এক আলোচনা করা যাক!
২। প্রাণ কিভাবে প্রাণের মত এত কাজ করে?
৩। এদের মধ্যে পার্থক্যটা কি?
৪। পার্থক্য কি বিবর্তনের জন্যই?এসব প্রশ্নের উত্তর একের পর এক আলোচনা করা যাক!
প্রাণ কি জিনিস?
খুবই জটিল প্রশ্ন! সচরাচর এইটার definition philosophyর দায়িত্বে পরে। কিন্তু বর্তমানের science এর যুগে philosophy is dead। এইটা science এর গতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারে নাই, তাই philosophy definition দিতে পারবে, কিন্তু তা ঠিক হবে কি হবে না তা নিশ্চিত না। তাই অবশ্যই আমরা Life এর definition science এর কাছ থেকেই জানতে চাইব।
পদার্থবিজ্ঞানী Erwin schrodinger এ ব্যাপারে বলেন, Living things avoid decay into disorder and equilibrium। কথাটা সহজে বোধগম্য না, তাই ভেঙ্গে বলি। মনে করেন, আপনার বাসায় প্রতিদিন অগোছালো হয়, ময়লা পরে, নোংরা হয়, সোজা অর্থে disorder হয়। এভাবে চললে, disorder হতে হতে, অগোছালো হতে হতে এমন অবস্থায় পৌঁছাবে যখন আর অগোছালো করা সম্ভব হবে না, অর্থাৎ equilibrium এ পৌঁছে গেছে। কিন্তু আপনি তা হতে দিবেন না! আপনি নিজের শক্তি বা energy খরচ করে পুরা ঘর গুছাবেন, নইলে আপনি টিকতে পারবেন না!
এইটা খুব simple উদাহরণ। এখন এইসব টাইপ কাজ যাদের প্রাণ আছে তারা করে, কিন্তু প্রাণ বলতে কি বুঝায়? এইটা কি কোন অলৌকিক কিছু? না physics এর নিয়মের মধ্যে পরে সব?
মানব দেহ নিয়েই বলি। মানব দেহ অনেকগুলা অঙ্গের সমষ্টি, আর বেশিরভাগই জরুরি! যেমন হৃদপিণ্ড। হৃদপিণ্ড ছাড়া আমরা বাচতে পারব না। এখন প্রশ্ন হল, হৃদপিণ্ডের কি “প্রাণ” আছে?
খালি চোখে হৃদপিণ্ড কেমন তা সবাই মোটামুটি জানেন বা জানতে চাইলে জানতে পারবেন। কিন্তু “প্রাণ” তো দেখা যাচ্ছে না! আধুনিক যুগে আমরা microscope ব্যবহার করতে পারি। Miscroscopeএর নিচে হৃদপিণ্ড দেখতে ঠিক নিচের ছবিটার মত লাগে।
এইখানে যে বেগুনি জিনিসগুলা দেখা যাচ্ছে এগুলা হল “কোষ”। জিনিসগুলা খুবই ছোট! বড়জোর ১০০ মাইক্রোমিটার লম্বা, খালি চোখে দেখা অসম্ভব! এখন হৃদপিণ্ড কখনো নিজে pump করে না! এই কোষগুলা pump করে! সবগুলা কোষের একটা organized সঙ্কোচনের মাধ্যমে পুরা হৃদপিণ্ড কাজ করে। যা করতেছে সব কোষ! হৃদপিণ্ড বলতে কিছু নাই এখানে! (লাল টা হচ্ছে Adipose tissue)।
তাই আমরা বলতে পারি, “হৃদপিণ্ডের প্রাণ নাই, কিন্তু কোষের ‘সম্ভবত’ প্রাণ আছে”।
এখন শরীরের যেখানেই যাই, এমনকি হাড়ের মধ্যেও, সবকিছুই “কোষ” দিয়ে তৈরি। “কোষ” গুলো একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে এক এক টা অঙ্গ সচল রাখে, আর অঙ্গগুলো আমাদের সচল রাখে! সব মিলিয়ে আমাদের শরীরে ৩৭ ট্রিলিয়ন বা ৩৭,০০০,০০০,০০০,০০০ কোটি কোষ আছে! এই এতগুলা কোষের ক্রিয়াকর্মের ফসল আমি, আপনি।
আবার! দুনিয়ার যে প্রান্তেই যাই, যত সব জিনিসের “প্রাণ” আছে, সবাই কোষ দিয়ে তৈরি (ভাইরাস ব্যতিক্রম)! নিচে ৩ ধরনের “প্রাণের” ৩ ধরনের ছবি! প্রথমটা মানুষের, দ্বিতীয়টা পেয়াজের, তৃতীয়টা ব্যাকটেরিয়ার। এইখানে সবচেয়ে ব্যতিক্রম “ব্যাকটেরিয়া”, এদের শুধু মাত্র একটা “কোষ”!
সবার “প্রাণ” আছে কারণ সবাই “কোষ” দিয়ে তৈরি আর “কোষ” মানেই প্রাণ!
এতটুকু পর্যন্ত বোঝা গেল যে, আপনি থেকে কোষ পর্যন্ত কোন জাদু বা অলৌকিক ব্যাপার নাই। একটা মাইক্রোস্কোপ নিয়ে বসলেই বিষয়টা চাক্ষুষ দেখা যায়, বোঝা যায় যে আপনি কোষের তৈরি। আপনার কোষ যেভাবে চলবে আপনিও সেভাবে চলবেন, কোষের সমস্যা হলে আপনার সমস্যা হবে।
যেমন, আপনার অগ্নাশয় কোষ যদি ইনসুলিন তৈরি না করে আপনার diabetics হবে। আপনার হৃদপিণ্ডের বা কলিজার কোষ যদি কাজ না করে, আপনি মারাই যাবেন! আর ব্রেইন ইনজুরি তো আরও বড় সমস্যা! আপনি কে, আপনার সব স্মৃতি, আপনার personality সব কিছু মস্তিষ্কের ভিতর থাকা কয়েক বিলিয়ন নিউরনের ক্রিয়াকর্মের ফসল। যদি মস্তিষ্কের নিউরন কোষে সমস্যা হয়, তাহলে আপনার অবশ্যই সমস্যা হবে। কেমন সমস্যা হবে নির্ভর করে ইনজুরি কোথায় তার উপর। যেমন, Cerebellum এ ইনজুরি হলে, হাটা চলায় balance রাখতে সমস্যা হতে পারে, হাত নারাতে সমস্যা হতে পারে, তোতলামি আস্তে পারে, আরও অনেক কিছুই হতে পারে। এইসব সমস্যাকে একসাথে ataxia বলা হয়। Occipital Lobe এ ইনজুরি হলে, চোখে দেখতে সমস্যা হতে পারে।
কিন্তু আপনি যে আপনি বা আমি যে আমি, এইটাও কি বদলে যেতে পারে? হ্যাঁ বদলাতে পারে। Frontal Lobe, Corpus Callosum বা Parietal Lobe ইনজুরি হলে স্মৃতি হারিয়ে যেতে পারে, লেখতে ভুলে যেতে পারেন এমনকি আপনার personalityই পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে, মানে আপনি আপনি নাও থাকতে পারি, অন্য কেও হয়ে যেতে পারেন! Traumatic brain injury পর personality পরিবর্তন হওয়া খুবই কমন ঘটনা। ( বিঃদ্রঃ ছবির মত মস্তিষ্কের কাজ ঠিক এইভাবে ভাগ করা থাকে না। যে কোন কাজ, যেমন কথা বলতে প্রায় সম্পূর্ণ মস্তিষ্কই কাজ করে।)
যা বোঝাতে চাচ্ছি তা হোল, আপনি কে এইটা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোষের কার্যক্রমের উপর! আপনার নিজস্ব কোন সত্ত্বা বলতে এখানে কিছু নাই! আপনি নিজে কোন প্রাণ না, আপনি প্রাণের কার্যক্রমের ফসল। আর এই প্রাণের নাম “কোষ”।
কোষ কি জিনিস?
ইতিমধ্যে প্রাণের সংজ্ঞা বদলে গেছে! আমরা “কোষ”কে প্রাণ বলতেছি। কিন্তু আমরা এখানেই থামব না! আমরা দেখতে চাই, “কোষ” আসলে কি জিনিস! কোষের আচরণ কি? কোষ কি করে?
কোষ অনেক কিছুই করে, যেমন,
১। কোষ নিজের চারপাশে ১টা দেয়াল তৈরি করে, যেটাকে বলি আমরা cell membrane, উদ্ভিদ কোষে cell wallও থাকে।
২। কোষের দেয়ালের মধ্যে gate মত ব্যবস্থা থাকে, যা দিয়ে সে প্রয়োজন অনুযায়ী বাইরের জিনিস ভিতরে আনে, যেমন “খাদ্য”, ভেতরের জিনিস বাইরে পাঠায়।
৩। কোষ খায়
৪। কোষ বড় হয়
৫। কোষ নতুন কোষ জন্ম দেয়
৬। কোষ আশেপাশের পরিবেশের সাথে interact করে
২। কোষের দেয়ালের মধ্যে gate মত ব্যবস্থা থাকে, যা দিয়ে সে প্রয়োজন অনুযায়ী বাইরের জিনিস ভিতরে আনে, যেমন “খাদ্য”, ভেতরের জিনিস বাইরে পাঠায়।
৩। কোষ খায়
৪। কোষ বড় হয়
৫। কোষ নতুন কোষ জন্ম দেয়
৬। কোষ আশেপাশের পরিবেশের সাথে interact করে
একটা মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যা করে, কোষ এ সবই করে। ব্যবহার আপনার আর কোষের সাথে খুব মিলে যায়। “প্রাণ” বলে কথা! এখন নিচের ছবিটা একটা কলিজার (liver) কোষের ভিতরের ছবি। নানা ধরনের জিনিস দেখা যাচ্ছে! অনেকেই হয়ত বুঝতে পারবেন যে ওই সবুজ জিনিসগুলা “mitochondria”, আর নীল জিনিসটা “golgi apparatus “। তবে যে যাই হোক, এগুলা কোষের ভিতরের জিনিস, আর এই সবগুলাই “মৃত” বা dead!
এই ছবি থেকে পাঠকের বুঝতে সমস্যা হতে পারে যে, কোষের ভিতরটা আসলে কি রকম। তাই একটা simplified চিত্র এর নিচে আরেকটা দেয়া হল।
এখন একটা খুব সহজ উদাহরণ দিই। কাগজ আগুনে পোড়ালে এখানে কি কোন প্রাণের ব্যাপার থাকে? থাকে না। এইটা পুরাই একটা chemical reaction। কাগজে এক ধরণের কার্বন যৌগ থাকে যেটাকে বলা হয় cellulose। এইটা যথেষ্ট তাপমাত্রায় বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে CO2 বা CO তৈরি করে, আর কিছু ছাই রেখে যায়।
কোষের ভিতরেও ওই ১ থেকে ৬ পর্যন্ত সবগুলা কাজ করার জন্য প্রতি সেকেন্ডে কয়েক মিলিয়ন chemical reaction হয়! এর মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ হল, krebs cycle বা Citric acid cycle। জিনিসটা কি বোঝার আগে, “কোষ”এর খাদ্য কি বোঝা জরুরি। আমাদের ক্ষুধা লাগলে আমরা ভাত খাই যাতে শরীরে শক্তি পাই, এই ভাতে থাকে carbohydrate। কোষের জন্য কিন্তু এই carbohydrateএর কোন মূল্য নাই। কোষের শক্তির জন্য লাগে Adenosine triphosphate (ATP)। কোষের যে কোন কাজ করতে এই ATP লাগবেই! আর তাই কোষের mitochondriaয় অনেকগুলো chemical reactionএর মাধ্যমে carbohydrate থেকে krebs cycle এর মাধ্যমে ATP তৈরি হয়। চক্রের পুরা প্রক্রিয়াটা নিচের চার্টে দেয়া হল।
বোঝাই যাচ্ছে, কত গুলা chemical reaction করে শেষ পর্যন্ত ATP আসে। কিন্তু যতই জটিল হোক, এতটুকু বোঝা যাচ্ছে যে এইখানে সবই chemical reaction যা physics দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়, পুরা প্রক্রিয়াটাই কাগজ পুরানোর মতন, মৃত জিনিসের কাজকারবার! “প্রাণ” বলে কিছু তো নাই, অলৌকিক বলেও কিছু নাই।
আর যারা mitochondria কি জানেন, তাদের জন্য। Mitochondriaর নিজস্ব genetic code থাকে, যা মানুষের থেকে আলাদা। এজন্য ধারণা করা হয় যে এইটা আগে ১টা prokaryotic কোষ, বা আলাদা “প্রাণ” ছিল, পরে eukaryotic কোষের ভেতর ঢুকে endosymbiont বা মিথোজীবী হিসেবে থাকা শুরু করে। ধীরে ধীরে এইটা তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে একটা “মৃত” জিনিসে পরিণত হয়। অর্থাৎ একটা জীবিত জিনিস মৃত জিনিস হচ্ছে, তাহলে প্রাণ আসলে কি জিনিস?
এ পর্যন্ত এসে আমরা “প্রাণ” কি এই ব্যাপারটাই ক্লিয়ার করতে পারলাম না! সম্ভবত এই প্রশ্নটাই অবান্তর তাই এইটা ক্লিয়ার করা সম্ভবও না, আপাতত এটা পাঠকের চিন্তার উপর বিষয়টা ছেরে দেয়া হল। ২ নম্বর প্রশ্নে চলে যাই।
প্রাণ কিভাবে প্রাণের মত এত কাজ করে?
যে ১ থেকে ৬ টা কাজ বলা হল, এই কাজ গুলা করে কোষ টিকে থাকে। আর সব কাজে যেমন শ্রমিক দরকার হয়, কোষেরও এমন শ্রমিক আছে। এই শ্রমিকের সাধারণ নাম হচ্ছে “প্রোটিন”।
এখন “প্রোটিন” আছে কয়েক হাজার ধরনের! এক এক প্রোটিন এক এক কাজ করে, আবার অনেকগুলা প্রোটিন মিলেও ১ টা কাজ করে। আর এরা কাজ করে chemical reaction এর মাধ্যমে। হাজার হাজার প্রোটিনের কোনটা কিরকম chemical reaction করে তা আলোচনা করতে গেলে অনেক বেশি আলোচনা হয়ে যাবে। আপাতত এইটা নিয়ে জানার দায়িত্ব আমি পাঠকের হাতে ছেরে দিলাম। তবে যাই হোক, প্রোটিনের কার্যক্রম বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে physics দাড়া ব্যাখ্যা করা যায়, কোন অলৌকিকতার সুযোগ নাই এখানে।
কোষের ভিতরে প্রোটিনের কাজ ব্যাপক! প্রোটিন তৈরির তথ্য রাখা ছাড়া আর সবকিছুই করে এরা! যেমন কোষের structure তৈরি হয় প্রোটিন দাড়া, এদের বলে, actin। কোষের জন্য খুবই important ion channel, পুরাটাই প্রোটিনে তৈরি! এরা কোষের মধ্যে ion এর ভারসাম্য বজায় রাখে।
কোষ বিভাজনের সময় প্রোটিন লাগে, এদের বলে Microtubule। কোষের ভিতর প্রোটিন তৈরি করতেও প্রোটিন লাগে! তাছাড়া আরও কোটি কোটি রকম কাজ করে কোষের ভিতর! কোষের বাইরের বা অন্য কোষের জন্যও কাজ অনেক! যেমন, আমাদের অন্ত্রে খাবার হজম করতে “এনজাইম” লাগে, এনজাইম এক ধরনের প্রোটিন, যা অন্ত্রের কোষ থেকে নিঃসৃত হয়। আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধের জন্য এন্টিবডি থাকে, এইটাও প্রোটিন, এদের B lymphocytes নামক এক ধরনের কোষ তৈরি করে রক্তে ছেরে দেয়। কোষের খাবার “glucose” কোষের ভিতরে নিতে কোষের বাইরে থেকে ইনসুলিন লাগে, এইটাও প্রোটিন। এই ইনসুলিন আবার তৈরি করে রক্তে ছারে অগ্নাশয়ের Beta কোষ। প্রোটিন শরীরও তৈরি করে। যেমন “কোলাজেন” তন্তু, সম্পূর্ণ প্রোটিনে তৈরি। এই তন্তু হাড় গঠন করে, কোষে কোষে জোরা লাগায়, মাংসে মাংসে জোরা লাগায় , হাড়ে হাড়ে জোরা লাগায়। আর মাংসপেশি তো আছেই! সবচেয়ে নামকরা প্রোটিন সম্ভবত “হিমোগ্লোবিন”, যে কারণে আমাদের রক্ত লাল। হিমোগ্লোবিন যে কোষে থাকে সেই কোষগুলা দেখতে নিচের মতন,
এই কোষগুলোর ভিতর হিমোগ্লোবিন দিয়ে ভর্তি! এই হিমোগ্লোবিন দেখতে বাম পাশের ছবিটার মতন। গোল গোল গুলা সব পরমানু! বঝাই যাচ্ছে পুরা প্রোটিনটাই একটা অনু, যেইটা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে যায়। কাজ করে ঠিকই, কিন্তু জিনিসটা “মৃত”, অনুর কোন জীবন নাই!
সব মিলিয়ে “কোষ” হচ্ছে Protein based robot! আর কিছু না!
যাই হোক, এবার দুইটি সহজ উদাহরণে আসি।
Growth hormone বা somatotropin নামে এক ধরনের “প্রোটিন” আছে যা মানুষের শরীর কত বড় হবে তা নির্ধারণ করে। মস্তিস্কের pituitary gland থেকে এটা নিঃসৃত হয়। এই প্রোটিন কলিজা আর অন্যান্য অঙ্গের কোষকে IGF-1 প্রোটিন তৈরি করতে উত্তেজিত করে। আবার IGF-1 প্রোটিন হাড় গঠন করে আর বড় করে আর হাড় বড় হবার সাথে সাথে অন্যান্য অঙ্গ, পেশী ইত্তাদির কোষ বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি হয়, ফলে বড় হয়, সবশেষে পুরা মানুষটাই বড় হয়। আর তাই somatotropin বেশি নিঃসৃত হলে বেশি লম্বা হবে, বড় হবে। নিঃসৃত হওয়া শেষ হয়ে গেলে আর লম্বা হবে না! ডানে এই প্রোটিনটার রাসায়নিক গঠন দেয়া হল।
এইটা একটামাত্র উদাহরণ, কিন্তু এ থেকে আমরা প্রোটিন যে আমাদের সবকিছুই করে এই সত্যটা বুঝতে পারি।
সবার শেষে সারমর্ম হল,
কে কেমন হবে নির্ভর করে “কোষ”এর উপর, আর কোষ কেমন হবে, কেমন আচরণ করবে, কয়টা হবে এইসব নির্ভর করে “প্রোটিন”এর কাজের উপর। কাজেই, গরু, মানুষ, পোকামাকড় যাই হোক, কোন প্রানির শরীর কেমন হবে, মস্তিস্ক কেমন হবে, আচরন কেমন হবে হব নির্ভর করে, প্রোটিনের কাজের উপর!
আচ্ছা এখন প্রোটিন সব কাজ করে, তাহলে প্রোটিন তৈরি করে কে আর নিয়ন্ত্রণ করে কে?
প্রোটিন কে তৈরি করে? কিভাবে তৈরি হয়?
আচ্ছা প্রোটিন বেশিদিন টিকে না, তাই নষ্ট হয়ে গেলে প্রোটিন তৈরি করতে হয়। আবার নির্দিষ্ট পরিমানে তৈরি করতে হয়, বেশি হলে সমস্যা, কম হলেও সমস্যা!
এখন, প্রোটিন আছে কয়েক হাজার ধরনের, কিন্তু প্রোটিন তৈরি হয় ২০ ধরনের amino acid দারা (মানুষের জন্য ২০, কিছু কিছু প্রাণীর ২২ টা লাগে, উদ্ভিদের প্রায় ১০০ ধরণের প্রোটিন লাগে), যেগুলো সোজা বাংলায় “অনু”। নিচে amio acid এর একটা ছবি দেয়া আছে, সব amino acid একই, পার্থক্য শুধু R groupএ। R group বলতে ছবিতে R টা বোঝানো হচ্ছে।
যাই হোক, এই ২০ ধরনের amino acid একটার সাথে আরেকটা নাইট্রোজেন বা peptide বন্ধনের সাহায্যে জোরা লাগিয়ে হাজার হাজার রকম প্রোটিন তৈরি করা যায়! যেমন নিচের ছবিতে ২ টা amino acid জোরা লাগানো হোল।
এখন যেন তেন ভাবে আন্দাজে জোড়া লাগালে তো হবে না! জোড়া নির্দিষ্ট প্রোটিন, নির্দিষ্ট ভাবে জোড়া লাগালে সেইটা কাজের প্রোটিন হবে!
সহজ উদাহরণ হল, কারও কাছে ২০ রকমের লেগো আছে। এই ২০ রকমের দিয়ে অসীম সংখ্যক জিনিস বানানো সম্ভব, কিন্তু যেনতেন ভাবে বানালে অই জিনিসের কোন মানে থাকবে না।
ঠিক তেমনি, প্রোটিন তৈরি করতে হলে ঠিক ভাবেই লাগাতে হবে! আর তাই কিভাবে জোড়া লাগাতে হবে, তা তো অবশ্যই কোথাও লেখা থাকতে হবে! কোষে এইটা কই লেখা থাকে?
প্রশ্নটার উত্তর খুজতে নিচের ছবিটি লক্ষ্য করি।
এইটা এক ধরণের immortal কোষের ছবি। সব কোষগুলার মধ্যেই মাঝখানে গোল মত একটা জিনিস আছে। এই জিনিসটাকে বলে “নিউক্লিয়াস”। এই নিউক্লিয়াসের মধ্যে ২৩ জোড়া chromosome দেখতে অনেকটা নিচের বাম পাশের ছবির মতন।
ভালোমতন বোঝা যাচ্ছে না। তাই একটা simplified ছবি দিলাম ডানপাশে। এখানে ২২ জোড়া chromosome দেখা যাচ্ছে X Y ছাড়া। এই ২২ জোড়ার অর্ধেক আর X আসছে মায়ের কাছ থেকে আর বাকি ২২ জোড়া আর Y আসছে বাবার কাছ থেকে। এখানে ১ টা কথা না বললেই নয় তা হল, সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে নির্ভর করে X Y উপর। ২টাই X, মানে XX হলে মেয়ে হবে আর ১টা X আর আরেকটা Y হলে ছেলে হবে।
যাই হোক, এই chromosomeআসলে কি? প্রতিটা chromosomeএর মধ্যে লম্বা পেচানো সুতার মত এক ধরনের অণু থাকে, এদের বলে DNA বা deoxyribonucleic acid! জিনিসটা অনেকটা পেচানো মইের মতন। Electron microscopeএর নিচে দেখে এদের এমন দেখায়।
মুলত chromosome গুলাই DNA। একটা কোষের সবগুলা chromosome এর DNA মিলে প্রায় ২ মিটার লম্বা, যা যে কোন স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও লম্বা। এত লম্বা জিনিসটা ৬ মাইক্রন জায়গার মাঝে থাকে! ছবিতে অই ২ মিটারএর মাঝে ২০০ ন্যানোমিটার অংশ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আসলে জিনিসটা কি বোঝা যাচ্ছে না! তাই DNAর একটা simplified চিত্র নিচে দেয়া হল।
এখানে কোষের নিউকিয়াসের ভিতর chromosome, আর chromosome খুললে DNA। আরও বিস্তারিত জানতে নিচের ছবিটা দেয়া হল। এই ছবিতে DNA থেকে chromosome পর্যন্ত দেখানো হচ্ছে। পাঠকরা বিস্তারিত জানতে নিজের থেকে পড়ে নিতে পারবেন।
যাই হোক, এখন দেখে আসি DNA আসলে কি। DNA হচ্ছে ১ টা অণু! আর কিছু না। নিচে এই অণুর একটা ক্ষুদ্র অংশের simplified চিত্র দেয়া হল।
Figure 15: DNA molecule
যাই হোক, মোট ৪ ধরনের জিনিস দিয়ে DNA তৈরি। Adenine (A), Thymine (T), Cytosine (C) আর Guanine (G)। এগুলাকে বলা হয় base। এই ৪ টা জিনিস দিয়েই কিরকম প্রোটিন কিভাবে তৈরি করতে হবে তা লেখা থাকে।
এখন প্রোটিন কিভাবে তৈরি হয় তা ব্যাখ্যা করা খুবই বিশাল আলোচনা। তাই আমি বর্ণনায় যাব না, আমি শুধু সারাংশ বলব যাতে পাঠকরা মোটামুটি আন্দাজ করতে পারেন আর নিজেরা পড়ালেখা করতে পারেন।
প্রোটিন বানানো বোঝার জন্য কয়েকটা জিনিস জানা জরুরি। DNAএর গঠন এবং জিন, gene।
সপ্তাহের ৭ দিন যেমন সংক্ষেপে Fri Sat Sun এইভাবে লেখা হয়, base pair গুলকেও সংক্ষেপে A T C আর G লেখা হয়। এখন A শুধু T এর সাথে আর C শুধুমাত্র G এর সাথেই লাগে। ফলে ১ টা DNA এর মইয়ের এক প্রান্ত জানা মানে, আরেকপ্রান্তও জানা। বিষয়টা নিচের ছবিটা দেখলেই আশা করি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এই মইয়ের ১ ১টা লাঠি হচ্ছে ১ ১ টা base pair। বামপাশের প্রথম base হচ্ছে T, যেহেতু T এর সাথে A লাগে তাই T-A মিলে ১টা base pair। এখন কয়েকটা base pair একসাথে মিলে ১টা gene তৈরি করে। ১টা জিন একটা নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরি করে।
এখন জেনে আসি প্রোটিন কিভাবে তৈরি হয়! প্রোটিন তৈরিতে ২টা ধাপ থাকে। প্রথমে, DNA র অংশটা “খুলে” ফেলা হয়।
তারপর খুলে ফেলা অংশ থেকে বিপরীত base pair দিয়ে mRNA তৈরি করা হয়, এইখানে U হচ্ছে Uracil, কারণটা কি তা পাঠকদের নিজের থেকে পড়ে নিতে বলা হল। RNA polymerase নামের ১টা প্রোটিন এই পুরো কাজ টা সম্ভব করে।
এই mRNA তে প্রোটিন বানানোর রেসিপি থাকে। তারপর Ribosome, যা প্রোটিন আর rRNA দিয়ে তৈরি, ওই রেসিপি থেকে প্রোটিন তৈরি করে!
ব্যাস প্রোটিন শেষ! আমি এখানে অনেক কিছু বাদ দিয়ে গেছি। পাঠকদের নিজের থেকে জেনে নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হল।
তাহলে সবগুলো কথা সংক্ষিপ্ত করলে যা হয়,
- মানুষের DNA মূলত ৪৬ টা chromosome এর মাঝে প্যাক করা থাকে।
- মানুষের DNA তে প্রায় ৩ বিলিয়ন DNA base pair থাকে।
- কয়েকটা base pair মিলে একটা gene তৈরি করে যা একটা নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরি করে।
- ৩ বিলিয়ন DNAর মাত্র ১% প্রোটিন তৈরিতে লাগে।
এখন শেষ কথা হল,
আপনার জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত DNA তে থাকা তথ্যের উপর ভিত্তি করে আপনার প্রোটিন তৈরি হচ্ছে, এই প্রোটিনগুলা কোষের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে কোষ বেচে আছে আর সব কাজ করছে। আর কোষের কার্যকলাপের মাধ্যমে আপনি আজ মানুষ হিসেবে বেচে আছেন আর মানুষ হবার কারণেই আপনি এই লেখাটা পড়ছেন।
ঠিক একইভাবে ১টা গাছেরও জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত কোষে প্রোটিন তৈরি হচ্ছে, আর একইভাবে এই প্রোটিন কোষের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গাছকে জীবিত রেখেছে। কিন্তু সে গাছ হবার কারণে এই লেখাটা পড়তে পারছে না।
এখন আমরা ৩ নম্বর প্রস্নের উত্তরে চলে যাই।
এদের মধ্যে পার্থক্যটা কি?
ইতিমধ্যে এটা পরিষ্কার যে, একটা গাছ হোক আর একটা মানুষ হোক, সবাই “প্রোটিনের” মাধ্যমে কাজ করে আর এদের মূল পার্থক্য হচ্ছে, “গাছ আর মানুষের DNA আলাদা”। আর কিছু না।
যে কোন কোষ হোক (বিশেষ কোষ ছাড়া), সবার মাঝে এই DNA থাকে! আর এই অণুতে সব তথ্য লেখা থাকে chemical information হিসেবে। এখন আপনার শরীরের যে কোন কোষই নেয়া হোক না কেন, তার ডিএনএ এক! একই দেহে কোষের কাজ আলাদা হতে পারে, কিন্তু সব কোষে ডিএনএ একই।
কিন্তু আপনি ছাড়া আর যে কারও ডিএনএ আলাদা! আপনার থেকে আপনার বাবা মায়ের ডিএনএ একটু আলাদা, আপনার থেকে ১টা গাছের ডিএনএ অনেক বেশি আলাদা।
যে কোন প্রাণীর ডিএনএ হচ্ছে তার পরিচয়, আইডি এর মতন! এইটা গাছ হোক, সাপ হোক, মানুষ হোক।
এখন ২ টা প্রশ্ন আশা উচিত।
- আপনার সব কোষে DNA এক হলেও কোষের কাজ আলাদা হয় কিভাবে?
উত্তর হোল, সব কোষে সম্পূর্ণ DNA active থাকে না। যে কোষে যে প্রোটিন তৈরি করতে হবে DNAর সেই অংশ কার্যকর থাকে। এই কার্যকর কিভাবে হয়, সেইটাও অনেক বড় আলোচনা! আমি এইটা নিয়ে লেখাপড়ার দায়িত্ব পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম। নিচের ছবিটা সাহায্যের জন্য।
- এই DNA কি change হয়?
উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ! অনেক চেইঞ্জ হয়! আর এখানেই আমরা চলে যাব ৪ নম্বর প্রশ্নে!
পার্থক্য কি বিবর্তনের জন্যই?
“ক্যান্সার” কি জিনিস তা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। যখন কোষ বিভাজিত হতেই থাকে হতেই থাকে হতেই থাকে… কিন্তু কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের হঠাৎ কেন ক্যান্সার হবে? উত্তর হল “Mutation”। এই আলোচনার শেষে আশা করি পাঠকরা বুঝতে পারবেন এইটা কিভাবে হয়। তবে শুরুতে mutation কি জিনিস তা জেনে নিই।
Mutation হচ্ছে DNA র Base pair এর permanent পরিবর্তন! আরও ভালভাবে বুঝতে আমরা নিচের ছবিটা লক্ষ করি। এখানে সব base pair ঠিকঠাক মত আছে, কিন্তু কেমন হবে যদি দ্বিতীয় base pair এ C এর জায়গায় ভুলে A আসে? Mutation হবে! আর এই mutation এর ফলে, যদি এই base কোন প্রোটিন তৈরিতে কাজে আসত তাহলে এখন সে আর হয়ত ওভাবে আসবেনা! হয় ওই প্রোটিন তৈরি হবে না বা অন্য রকম প্রোটিন তৈরি হবে!
এই ধরনের mutation কে বলে substitution বা point mutation । এছাড়া এর চেয়েও ভয়াবহ আরও ২টা আছে, deletion আর addition। Deletion, addition যে কোন ১টা হলে প্রোটিন তৈরি পুরাই উল্টাপাল্টা হয়ে যাবে! হয় হবেই না, নইলে আলাদা ধরণের প্রোটিন তৈরি হবে। নিচের ছবিটা দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে এর মানে কি!
এই ধরণের অবস্থা কখন হয়? সবসময়ই হয়! নানা কারনেই হয়, তবে সবচেয়ে বেশি হয় “কোষ বিভাজন”এর সময়! কোষ বিভাজনের সময় কি হয় তার একটা কিঞ্চিত ধারণা দেয়ার জন্য নিচের ছবিটা। পাঠক নিজের থেকে পড়ে নেবেন।
কোষ বিভাজন ২ প্রকার, Mitosis আর miosis। যেইটাই হোক, ১টা কোষের বিভাজনের সময় DNA পুরাপুরি খুলে ফেলা হয়, মানে ২ টা মই আলাদা করা হয়। তারপর আলাদা হউয়া মই গুলো পুনর্গঠন করা হয়! পুরো পক্রিয়াটায় প্রচুর ভুল হয় আর DNA damage হয় ১০০০০ থেকে ১০০০০০০ এর মতন! অই damage ঠিক করতে আলাদা প্রোটিন থাকে। এরা অধিকাংশ ভুল শুধরে দিলেও সব শুধরাতে পারে না!
আর যে ভুল শুধরাতে পারে না, সেই ভুল টিকে থাকে, permanent হয়ে যায়। আর সেইটাই Mutation।
ফলে প্রতি কোষ বিভাজনে অনেক mutation হয়। আর সব মিলিয়ে mutation আরও বাজে রকমের হতে পারে! পুরা chromosomeই উল্টাপাল্টা হয়ে যেতে পারে! যাই হোক, এই mutation কোষের উপর ৩ টা প্রভাব ফেলতে পারে।
- কোন প্রভাব ফেলবে না। কোষ যেমন আছে, তেমনই থাকবে
কোষের সব DNAর মাত্র ১% প্রোটিন তৈরি করে। যদি ভুল ওই ১% এর বাইরে হয় তাহলে সেই অংশ যেহেতু কোন প্রোটিন তৈরি করে না বা অন্যান্য কোন কাজে আসে না তাই কোষের কোন পরিবর্তন হবে না।
- কোষ নতুন ধরণের প্রোটিন তৈরি করবে বা করবেই না
যদি mutation ১% এর মধ্যে হয় যা প্রোটিন তৈরি করে, তাহলে প্রোটিন তৈরি করে এমন gene এর base pair পরিবর্তন হয়ে যাবে। Base pair পরিবর্তন হলে আগে যে প্রোটিন তৈরি হত, এখন সে আর আগের মতন প্রোটিন তৈরি করবে না।
- একটা হচ্ছে সে কোন প্রোটিনই তৈরিই করবে না! ফলে, প্রোটিন তৈরি না হলে কোষের সমস্যা হবে আর কোষ মারা যেতে পারে। কোষের সমস্যা না হলেও অন্যান্য কোষের সমস্যা হতে পারে।
- আরেকটা হচ্ছে কোষ নতুন ধরণের প্রোটিন তৈরি করবে! যেহেতু base pair পরিবর্তিত, তাহলে সে অন্য রকম প্রোটিন তৈরি করতে পারে। এইটা ৩ রকম হতে পারে,
- এই নতুন প্রোটিন হয় কিছুই করবে না, কোন কাজেই আসবে না! কারন যেমন খুশি amino acid জোরা লাগাইলেই কাজের প্রোটিন হয় না।
- এই নতুন প্রোটিন উপকার করবে।
- এই নতুন প্রোটিন ক্ষতি করবে।
- নতুন প্রোটিনই তৈরি করবে কিন্তু তা আগের কাজটাই করবে! একেবারে শেষের দিকে এর একটা উদাহরণ দেয়া হয়েছে।
এখন আমাদের দেহের উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে?
Mitosis কোষ বিভাজন
শুরুতে mitosis কোষ বিভাজন নিয়ে বলব। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত নতুন কোষ তৈরি হচ্ছে, পুরানো কোষ replace করছে। এখানে ১ টা কোষ থেকে ২টা কোষ উৎপন্ন হয় আর সবার মধ্যেই ২৩ জোড়া chromosomeই থাকে। এ ক্ষেত্রে,
- কিছুই করবে না! দেহে কয়েক হাজার কোটি কোষ আছে। এর মধ্যে ১টা কোষ ভালো করল কি খারাপ করল তাতে কিছু যায় আসে না।
- বিশাল সমস্যা হবে! খুব বেশি বাজে mutation হলে অই কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হতে পারে আর ক্যান্সার তৈরি করতে পারে! আরও বড় সমস্যা হল, ক্যান্সার কোষগুলোতেও mutation হতে থাকবে! ফলে দেহে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার কোষ হবে! মুলত এই কারণেই ক্যান্সারের চিকিৎসা খুবই কঠিন।
Miosis কোষ বিভাজন
এবার আসি miosis কোষ বিভাজনে! Miosis কোষ বিভাজনে ১টা কোষের ২৩ জোড়া chromosome থেকে শুধু ২৩ টা chromosome নিয়ে ১টা নতুন কোষ তৈরি হয় যা প্রজননের জন্য লাগে। এ পক্রিয়ায় ডিম্বাণু আর শুক্রাণু উৎপন্ন হয়।
আর আমরা সবাই জানি প্রজননের সময় ডিম্বাণু আর শুক্রাণু মিলে ১ টি মাত্র কোষ তৈরি হয়। ওই ১টি কোষ বিভাজিত হতে হতে বড় হয়।
এই ক্ষেত্রে ছোটো একটা mutation বিশাল ভুমিকা রাখতে পারে! কারণ এখানে ১টা মাত্র কোষ যার ২৩ জোড়া DNA। যদি কোন mutation হয়, তাহলে ওই প্রাণী বড় হবার পর তার সমস্ত কোষে একই mutation থাকবে।
আর এইটাকেই বলা হয় mutant! আর mutation এরকম এক এক টা base pair এর পরিবর্তন হবে ব্যাপারটা সবসময় এমন হয় না! মাঝে মধ্যে পুরো chromosome টাই উল্টাপাল্টা হয়ে যায়!
এর কি কোন উদাহরণ আছে?
একটা সরাসরি উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। চোখের রঙ!
মানুষের ইতিহাসের সবসময় সবার চোখ ছিল “কালো” বা “বাদামি”, কিন্তু প্রায় ১০০০০ বছর আগে নীল চোখ হঠাৎ আসা শুরু করে। এখন ইউরোপে ২০% থেকে ৪০% মানুষের চোখ “নীল”। ঠিক এমনটা কেন হল তা বুঝতে হলে নীল চোখের মানুষের চোখ নীল কেন এইটা জানতে হবে!
চোখের রঙ কালো হয় melanin নামক এক রঞ্জক পদার্থের জন্য যা চামড়ার নিচে melanocyte নামক এক কোষ উৎপন্ন করে। যদি বেশি melanin তরি হয়, কালো হবে, কম হলে সবুজাভ, একেবারে কম হলে নীল। এই melanin তৈরি করবে কি করবে না, কতটুকু তৈরি করবে, কই তৈরি করবে তা নির্ধারিত হয় প্রায় ১৬টা জিনের দারা! তবে যাদের চোখ নীল তাদের ১৬ টা জিনের ১টায় সমস্যা থাকে! জিনের নাম OCA2। সমস্যা থাকা মানে, এই জিনে base pair উল্টাপাল্টা। তাই এই জিন প্রোটিন তৈরি করতে পারে না! প্রোটিন তৈরি না করতে পারায় melanin তৈরি হয় না! ফলে চোখ নীল হয়।
না হয় না! যদি মায়ের OCA2 তে সমস্যা থাকে আর বাবার OCA2 ঠিক থাকে, তাহলে হবে না, তখন বাবারটা ঐ প্রোটিন তৈরি করবে! কিন্তু যদি ২ জনেরটাই একই হয় তাহলে হবেই, কারণ কেউ এই প্রোটিন তৈরি করবে না।
যাই হোক, ১০০০০ বছর আগে কোন এক ডিম্বাণু বা শুক্রাণুতে ঠিকঠাক মত বিভাজন না হওয়ায় DNA এর ঐ অংশটা (OCA2) mutated হয়ে যায়। ফলে অই ১জন থেকেই নীল চোখের মানুষ আসা শুরু করে।
এই নীল চোখের কোন ভালো বা খারাপ কিছু নাই। এবার তাহলে একটা খারাপ উদাহরণ দেই। Sickle cell anemia নামক এক রোগ আছে। এই রোগীদের লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন প্রোটিন তৈরি হয় না, ফলে রক্তশূন্যতা দেখা যায়। মূল কারণটা হচ্ছে, DNAর যে অংশ, gene, হিমোগ্লোবিন প্রোটিন তৈরি করে তা mutated! যদি বাবা আর মা ২ জনের কাছ থেকেই আসা chromosome এ এই একই mutation থাকে তবে তার এই সমস্যা হবেই! কিন্তু যদি শুধু ১ জনের কাছ থেকে স্বাভাবিক কপি আসে আর আরেকজনের কপি mutated হয় তবে তার এই রোগ হবে না, কিন্তু সে এই রোগের বাহক হবে! তার সন্তানের এইটা হতে পারে!
এইবার একটা ভালো উদাহরণ দেই! যারা এই sickle cell anemiaর বাহক, তাদের এই রোগ তো হয় না, বরং তারা মালেরিয়ার প্রতি বেশ resistive হয়! মানে ১ টা mutation একই সাথে খারাপ আবার একই সাথে ভালো কাজ করছে!
এইটা উদাহরণ, কিন্তু আমাদের চারপাশে তাকালেই বোঝা যায় এক এক জনের চেহারা এক এক রকম, শরীর এক এক রকম। যত দূরে যাই এই পরিবর্তন আরও বাড়তে থাকে। এর কারণ কি সহজেই বোঝা যায়, mutation। ২ লক্ষ বছর ধরে এত প্রজনন হয়েছে, এত mutation হয়েছে, ফলে আমাদের (homo sapience) মাঝে এত variation।
তাহলে সারাংশ হচ্ছে,
- Mutation সব “জীবের”ই হয় আর randomly হয়, কোন কিছু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, কোন কিছুর ইচ্ছা দ্বারা নিয়ন্ত্রন হয় না। মানুষেরও mutation হয়েছিল, হচ্ছে, হবে।
- অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই mutation আজাইরা, কোন কাজে আসে না। মাঝে মধ্যে বাজে কাজে আসে আর মাঝে মাঝে ভালো কাজে আসে। যেহেতু পুরো প্রকিয়াটাই random, এইটার কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নাই।
- যদি দেহের একটা কোষ mutated হয় (যা হচ্ছে নিয়মিত) তবে তার প্রভাব খুবই অল্প, কারণ কোটি কোটি কোষের মাঝে একটা তেমন প্রভাব ফেলে না, ক্যান্সার একটা ব্যাতিক্রম!
- আর যদি “সফল” প্রজনন কোষে, ডিম্বাণু বা শুক্রাণুতে mutation হয় তাহলে তা থেকে উৎপন্ন সমস্ত “প্রাণ”টাই mutant।
- আমরা সবাই mutant! আমাদের বাবা মার অর্ধেক কপি থেকে আমাদের DNA সম্পূর্ণ এক না! একটু পরিবর্তন আছেই! কিন্তু পরিবর্তনের কোন প্রভাব নাই বা খুবই সামান্য।
আচ্ছা এসব তো অল্প পরিবর্তন! কিন্তু প্রজাতি পরিবর্তন কি সম্ভব?
আগে প্রজাতি কি জানা জরুরি। এইটা একটা প্রাণীর group যারা নিজেদের মাঝে প্রজননের মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান তৈরি করতে পারে! যেমন মানুষ, homo sapience, দেখতে বিভিন্ন রকম হলেও পুরটা একই প্রজাতি! এদের মাঝে DNA difference আছে, কিন্তু অতটা না যে সন্তান হবে না।
কিন্তু বাঘ আর সিংহ দেখতে একটু মিল থাকলেও এরা আলাদা প্রজাতি! এদের মিলনে সন্তান হয়, কিন্তু তা সুস্থ হয় না। কারণ এরা খুব কাছাকাছি প্রজাতি। এদের DNA difference অত বেশি না যে সন্তান হবে না! কিন্তু যথেষ্ট বেশি যে সন্তান সুস্থ হবে না!
আবার গাধা আর বাঘের মিলনে কিছুই হবে না! এদের DNA difference অনেক বেশি! শুক্রাণু আর ডিম্বাণুই মিলিত হবে না!
যাই হোক, মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস প্রায় ২ লক্ষ বছর, কিন্তু আমাদের কাছে জানা ইতিহাস আছে কয়েক হাজার বছর। মানুষের DNA তে প্রায় ৩ বিলিয়ন base pair থাকে। এত লম্বা base pair যথেষ্ট পরিবর্তন এসে নতুন প্রজাতি তৈরি হতে লক্ষ বছর লাগবে! তাই মানব ইতিহাসে মানুষের প্রজাতি পরিবর্তনের কোন “চাক্ষুষ” প্রমাণ নাই। আর চাক্ষুষ প্রমাণ থাকতেই হবে এমন কোন কথা নাই। এই পুরো লেখাটা যে একটা মানুষ লিখেছে তা বুঝতে প্রমাণ লাগে না, কারণ অন্য কোন প্রাণী বা কম্পিউটারের এই লেখা লেখার সামর্থ্য নাই।
মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস অনেক বড়, অন্তত ২ লক্ষ বছরের গল্প না বললেই নয়! গুগল সার্চ করলেই অনেক ধারণা পাওয়া যাবে। আমি এখানে বেশি কিছু তাই বলব না, ফসিল রেকর্ড নিয়েও আমি কিছু বলব না, আমি শুধু কয়েকটা উদাহরণ দিব DNAর আলোকে।
যদি এতটুকু বোঝা যায় যে DNA কোন চিরস্থায়ী জিনিস না, প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে তাহলে এইটাও বোঝা যায় যে অনেক বেশি change হলে সম্পূর্ণ প্রজাতি পরিবর্তন হওয়াটা খুবই সম্ভব।
আর এই পরিবর্তন হুট করে আসে না! একটু একটু করে আসে, যেমন আপনিও mutant, কিন্তু খুবই অল্প! গড়ে ৩ লক্ষ base pair এর মাঝে প্রতি প্রজন্মে ৭০ টা mutated হয়। অর্থাৎ, আপনার সাথে আপনার বাবা মার DNAর ৭০ টা base pair mutationএর কারণে আলাদা বা নতুন! দাদা দাদি, নানা নানির (৪ জন) ক্ষেত্রে ১৪০ টা, আর তাদের পিতা মাতা (৮ জন) এর সাথে ২১০ টা! নিচে ১টা চার্ট দেয়া হল জিনিসটা বোঝার জন্য।
যদি ১০০০ প্রজন্ম ধরে একটু একটু পরিবর্তন হলে base pair পরিবর্তন হতে পারে ৭০হাজার! এমনটা ঠিক হয় না নানা কারণে, কিন্তু হতে পারে! এতগুলা base pair পরিবর্তন হতে থাকলে সম্পূর্ণ অন্য একটা প্রজাতি থেকে আলাদা একটা প্রজাতি যে আসবেই আর এই আসা যে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা তা বোঝা যাচ্ছে! আর মানুষ, homo sapience যে আগে মানুষ ছিল না, অন্য প্রজাতি থেকে একটু একটু পরিবর্তন হতে হতে এসেছে তাও বোঝা যাচ্ছে!
আর এইটা শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য না, যে কোন “জীব”এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য!
আর এতটুকু বুঝলেই “বিবর্তন” যে কোন “ধারণা” না, এইটা একটা “সত্য” তা বোঝা যায়। আর ফসিল প্রমান তো বোনাস! এখন বিজ্ঞানের যুগে তাই “বিবর্তন” অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই, বিবর্তন অস্বীকার করা আর “মহাকর্ষ” অস্বীকার করা একই জাতে পরে। পার্থক্যটা হল, বিবর্তন চোখের সামনে দেখা যায় না, তাই যথেষ্ট জ্ঞান না থাকলে এইটা বোঝা বেশ কঠিন হয়ে দাড়ায়।
তবে বিবর্তনের পুরো প্রক্রিয়াটা আরও একটু জটিল! যে কারণে ৭০ হাজার base pair এভাবে পরিবর্তন হয় না! Natural selection বলে একটা টার্ম আছে যা পুরো প্রক্রিয়াটা চালায়। একটা সহজ উদাহরণ হচ্ছে, বাজে mutation হলে প্রাণী টিকবে না, মরে যাবে, ফলে বেশি সন্তান উৎপন্ন করতে পারবে না, আর ভালো mutation হলে প্রাণী টিকবে, বেশি সন্তান তৈরি করবে, ফলে ওই mutation টিকে থাকবে! আর এই “ভালো” “খারাপ” নির্ধারণ করে Nature! তবে এইটা বুঝতে হবে, nature কোন জীবিত জিনিস না, যেমন বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলে সাদা ভাল্লুক পাওয়া যায়, কারণ সাদা হবার কারণে তাদের সহজে দেখা যায় না, তাই সাদা গুলাই টিকে থাকে, অন্য রঙ হলে মরে যায়। বিস্তারিত জানতে পাঠকদের নিজের থেকে পরে নিতে বলা হল।
যাই হোক, এতটুকু বোঝানোই এই লেখার লক্ষ্য। তারপরও মানুষের বিবর্তন নিয়ে আরও একটু না বললেই নয়!
এর জন্য একটা বিশেষ প্রোটিন বেছে নেয়া যাক, “হিমোগ্লোবিন”। আমরা জানি যে “হিমোগ্লোবিন” ১টা প্রোটিন। আর প্রোটিন amino acid এর চেইন দ্বারা তৈরি। DNA mutation মানে ভিন্ন রকম amino acid প্রোটিন তৈরি করবে। ভিন্ন amino acid দিয়ে তৈরি হলেও সেই প্রোটিন একই কাজে করতে পারে, বা একই কাজ এর চেয়েও ভালোভাবে করতে পারে! যদি ঐ প্রোটিন কাজে আসে তো প্রাণী টিকে যাবে, যদি কাজে না আসে, ক্ষতি করে তাহলে প্রাণী টিকার সম্ভাবনা কম।
যাই হোক, আমরা তাই হিমোগ্লোবিনে amino acid এর পার্থক্য দেখবো বিভিন্ন প্রাণীতে।
প্রজাতি | মানুষের হিমোগ্লোবিন থেকে amio acid এর পার্থক্য |
গরিলা | ১ |
রেসাস বানর | ৮ |
ইঁদুর | ২৭ |
মুরগি | ৪৫ |
ব্যাঙ | ৬৭ |
লাম্প্রে | ১২৫ |
দেখা যাচ্ছে মানুষের সাথে গরিলার রক্তের হিমোগ্লোবিনে amio acid এর পার্থক্য সবচেয়ে কম, বানরের চেয়েও কম!
তবে তার মানে এই না যে আমরা গরিলা থেকে এসেছি! তার মানে এই যে, গরিলা আর আমাদের পূর্বপুরুষ একসময় একটা প্রজাতি ছিল! Mutation এর কারণে ওই প্রজাতির সন্তানরাই লক্ষ লক্ষ বছর ধরে একটু একটু করে পরিবর্তন হতে হতে ২ টা ভিন্ন প্রজাতি গঠন করেছে। ওই লক্ষ লক্ষ বছরে গরিলার হিমোগ্লবিনে পরিবর্তন হয়েছে, আমাদেরও হয়েছে!
একই ভাবে আমরা ইঁদুর থেকে আসি নাই। বরং কোটি কোটি বছর আগে মানুষ, গরিলা, রেসাস বানর আর ইদুরের প্রজাতি আগে একই ছিল! পরে ভাগ হয়ে গেছে।
একই কথা লাম্প্রের জন্যও প্রযোজ্য! আর যদি কেও দেখতে চায়, লাম্প্রে, lamprey, দেখতে কেমন তাদের জন্য নিচের ছবিটি দেয়া হল।
আরও অনেক চমৎকার আর শক্তিশালী উদাহরণ আছে! যেমন মানুষের সবচেয়ে কাছের প্রজাতি হচ্ছে “শিম্পাঞ্জী”। ধারণা করা হয় প্রায় ৪০ থেকে ৬০ লক্ষ্য বছর আগে এই দুই প্রজাতি আলাদা হয়ে গেছে। আর এই আলাদা হবার প্রমাণ খুব ভালোভাবে রেখে গেছে। কিন্তু কিভাবে তা আলোচনা অনেক বিস্তারিত করতে হবে বিধায় আমি শুধু সারাংশ বলে যাব, পড়ে নেবার দায়িত্ব পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম।
শিম্পাঞ্জী, গরিলা সবার chromosome এর সংখ্যা ২৪ জোরা, কিন্তু মানুষের ২৩ জোরা! এইটা একটা বিশাল সমস্যা! কারণ, একটা chromosome এ অন্তত কয়েক হাজার base pair থাকে। ৬০ লক্ষ বছরের মধ্যে এতগুলা base pair পরিবর্তন হওয়া খুবই অস্বাভাবিক!
কিন্তু এখানেই মূল মজা! গবেষণা করে দেখা গেল, মানুষের ২ নম্বর chromosome টা খুব অদ্ভুত! স্বাভাবিক chromosomeএ ১টা centromere আর ২টা telomere থাকে! কিন্তু ২ নম্বরটায় ২ টা centromere, যার মধ্যে ১টা কাজ করে না আর ৪ টা telomere, যার মধ্যে ২টা fused! আরও মজার ব্যাপার হল, ওই ২ নম্বর chromosome এর gene pattern শিম্পাঞ্জির 2a আর 2b chromosome এর সাথে মিলে যায়! এইটা একটা mutation যেখানে পুরো ২টা chromosome মিলে ১টা আলাদা chromosome গঠন করে!
অর্থাৎ হয়ত আজ থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ্য বছর আগে এই mutation টাই ২টা প্রজাতি আলাদা করে দেয়! কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি, ওই mutated প্রজাতি একটু একটু করে পরিবর্তিত হয়েছে, আর হতে হতে আজ এই অবস্থা!
শেষ কথা!
- “প্রাণ” কি এইটা খুবই জটিল আলোচনা! কিন্তু “প্রাণ”এর মাঝে কোন অলৌকিক কিছু নাই।
- আমরা কি এইটা নির্ধারিত হয় DNA দ্বারা। আর DNA যেহেতু নিয়মিত পরিবর্তন হচ্ছে তাই আমাদেরও পরিবর্তন হচ্ছে। Natural selection এর মাধ্যমে ভালো পরিবর্তনধারীরা টিকে থাকছে, খারাপ পরিবর্তনধারীরা মারা যাচ্ছে। আর এভাবেই লক্ষ লক্ষ বছর ধরে একটা প্রজাতি থেকে সম্পূর্ণ নতুন একটা প্রজাতি তৈরি হচ্ছে।
এখানে লেখায় আমি কিছু জিনিস উল্লেখ করি নি। যেমন, Epigenetics, Phylogenetic tree, Prokaryotic cell ইত্যাদি। হয়ত আরও অনেক কিছু! তবে বাকি সব কিছু পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম জেনে নেয়ার জন্য।
লেখক পরিচিতিঃ আদনান শাহরিয়ার
নাস্তিক্য ডট কমে এই বিষয়ে অন্যান্য লেখাঃ
বিবর্তনের কোনো প্রমাণ নেই?
বিবর্তনতত্ত্ব : কিছু ভুল ধারনা খন্ডন
মানুষের ( Homo Sapiens ) এক জোড়া পূর্বপুরুষ?
বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনস – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
যেভাবে জীবনের শুরু: পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি
যেভাবে জীবনের শুরু: প্রথম স্বয়ম্ভূর খোঁজে
যেভাবে জীবনের শুরু: প্রোটনের শক্তি
যেভাবে জীবনের শুরু: কোষের জন্ম
বিবর্তনতত্ত্ব : কিছু ভুল ধারনা খন্ডন
মানুষের ( Homo Sapiens ) এক জোড়া পূর্বপুরুষ?
বিগ ব্যাং থেকে হোমো স্যাপিয়েনস – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
যেভাবে জীবনের শুরু: পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি
যেভাবে জীবনের শুরু: প্রথম স্বয়ম্ভূর খোঁজে
যেভাবে জীবনের শুরু: প্রোটনের শক্তি
যেভাবে জীবনের শুরু: কোষের জন্ম
No comments:
Post a Comment