Wednesday, May 23, 2018

একজন সংশয়বাদীর প্রশ্নঃ এসব নির্দিষ্ট নিয়মে এবং নির্দিষ্ট গতিতে কি করে চলে? নাকি কেউ নিয়ন্ত্রণ করে?


শুরুতেই সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ স্পর্শকাতর ও অত্যাধিক অনুভূতি সম্পন্ন মানুষের এই লেখাটি এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো। কারণ কারো ঈমান বা আমল নষ্ট করা আমার উদ্দেশ্য নয়।
উপরের প্রশ্নের ব্যাখ্যা এরকম হবে, আমাদের এই মহাবিশ্ব, মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, কৃষ্ণগহ্বর, উল্কা, ধুমকেতু সহ মহাবিশ্ব বা ইউনিভার্স এর ভেতরে যত উপাদান মজুদ আছে এবং তারা যেভাবে তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে একই নিয়মে চলছে এবং মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রাকার একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্রাকার একটি গ্রহ আমাদের এই পৃথিবী তার যে প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাভাবিক ভাবে চলছে তা কি একা একাই চলছে না কেউ একজন এসব নিয়ন্ত্রণ করছে ? এখানে কেউ একজন বলতে এই সৃষ্টিবাদীরা সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরকে ইঙ্গিত করছে। একটি বিষয় এখানে লক্ষনীয় যে এই প্রশ্নকর্তা এতোটুকু নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এই পৃথিবীতে প্রচলিত হাজার হাজার ধর্মের কোটি কোটি সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরের নাম প্রচলিত আছে তাই সে কোন নির্দিষ্ট ধর্মের নির্দিষ্টি ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার নাম উল্লেখ করেনি তাই প্রশ্নকর্তাকে সংশয়বাদী বলা হচ্ছে।
প্রথমেই একটা বিষয় জানার চেষ্টা করি এমন প্রশ্ন কেনো মানব মস্তিষ্কে তৈরি হয়, এই সৃষ্টিবাদী বা ঈশ্বরবিশ্বাসী মানুষদের নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী শিশুকাল থেকেই শেখানো হয় এই পৃথিবীর সকল উপাদান, এই পৃথিবীর প্রানী জগৎ, প্রকৃতির বহমান নিয়ম ও মহাবিশ্বের সকল উপাদান ও নিয়মই তাদের নিজ নিজ ধর্মের সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টির পর থেকেই সেই সৃষ্টিকর্তা নিজেই এইসব নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। এমন অনেক বিশ্বাসী মানুষ আছে তারা তাদের পূর্ণ জীবনে একবারের জন্য বিবর্তনবাদের নাম শুনে নাই। অনেকেই ফেসবুকের মতো বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও ব্লগ সাইটে এসে জীবনের প্রথম বিবর্তনবাদ সম্পর্কে জানতে পারছে। হঠাৎ করে এতো বড় পরিবর্তন বা এরকম একটা মতবাদও যে পৃথিবীতে প্রচলিত থাকতে পারে বা আছে এটা দেখে তাদের মস্তিষ্কের এই বিষয়ে আটক থাকা নিউরন গুলা সক্রিয় হয়ে পড়ে। এবং একটা পর্যায়ে তাদের এই জাতীয় প্রশ্নের সাগরে পড়ে যাবার মত অবস্থা তৈরি হয়। কারণ এতোদিন তারা জানতো এই পৃথিবী সহ মহাবিশ্বের সবকিছুই তাদের সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি কিন্তু যখন তারা জানছে যে মহাবিশ্ব কোটি কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং এর ফলে সৃষ্ট এবং তারপর থেকে বর্তমানে প্রতিটি ছায়াপথ, গ্রহ, নক্ষত্র তাদের নিজ নিজ গতিতে নিজস্ব কক্ষপথে একা একাই চলছে এবং আমাদের পৃথিবীর সকল প্রাকৃতিক বিষয়ও একা একা ঘটছে যাতে কারও হাত নেই এসব শোনা ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেখার পরে তাদের মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরতে থাকে “এসব নির্দিষ্ট নিয়মে এবং নির্দিষ্ট গতিতে কি করে চলে? নাকি কেউ নিয়ন্ত্রণ করে? অর্থাৎ এই জাতীয় প্রশ্ন তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ঘটনা।
আসুন সংক্ষিপ্তভাবে আমরা একটু আলোচনা করে দেখি এই প্রশ্নে যা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, এসব কিভাবে চলছে বা কেউ কি নিয়ন্ত্রণ করছে কিনা বিষয়টি। আমরা জানি মহাবিশ্ব সৃষ্টির একটি তত্ত্ব হচ্ছে বিগ ব্যাং। এই তত্ত্ব অনুসারে ১৩৫০ কোটি বৎসর আগের কোন এক সময় একটি বিশাল বস্তুপিণ্ডের বিস্ফোরণের ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল যাতে কারো হাত ছিলো বা কেউ ঘটিয়েছে সেই বিস্ফোরণ এমন কোন প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পায়নি। ১৯২৭ সালে বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী জর্জ লেমিটর (Georges Lemaître) এই তত্ত্ব প্রথম প্রকাশ করেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে জর্জ লেমিটর এ তত্ত্ব প্রকাশ করলেও এই তত্ত্বকে বিস্তৃত করেন জর্জ গ্যামো। এখন লেমিটরের মতে সৃষ্টির আদিতে মহাবিশ্বের সকল বস্তু আন্তঃআকর্ষণে পুঞ্জীভূত হয় এবং একটি বৃহৎ পরমাণুতে পরিণত হয়। এই পরমাণুটি পরে বিস্ফোরিত হয়ে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। এই মতবাদকে সমর্থন ও ব্যাখ্যা করেন এডুইন হাবল (Edwin Hubble)। হাবল পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রমাণ পান যে, মহাকাশের গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে ক্রমান্বয়ে নির্দিষ্ট গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে। তাঁর মতে, আদিতে মহাবিস্ফোরণের ফলে গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল এবং এগুলোর দূরে সরে যাওয়ার আচরণ বিগ-ব্যাংকেই সমর্থন করে।
বিজ্ঞানীরা আমাদের পরিষ্কার ধারনা দিয়েছেন, বিগ ব্যাং এর ৩ সেকেণ্ড থেকে ১০০,০০০ বৎসরের মধ্যে সৃষ্ট কণাগুলো শীতল হয়ে উঠে। এই অবস্থায় বস্তুপুঞ্জে বিরাজমান ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন মিলিত হয়ে তৈরি হয় হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণু। এ ছাড়া এই দুটি পদার্থের সাথে ছিল প্রচুর ইলেক্ট্রন প্লাজমা। সব মিলিয়ে যে বিপুল বস্তুকণার সমাবেশ ঘটেছিল, সেগুলো প্রচণ্ড গতিতে বিগ ব্যাং-এর কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। এই সময় এই সকল কণিকাও ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। ক্রমে ক্রমে এগুলো শীতল হতে থাকলো এবং এদের ভিতরের আন্তঃআকর্ষণের কারণে কাছাকাছি চলে এসেছিল। ফলে বিপুল পরিমাণ বস্তুপুঞ্জ পৃথক পৃথক দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই পৃথক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পত্তন ঘটেছিল গ্যালাক্সি‘র (Galaxy)। আমাদের সৌরজগতও এরূপ একটি গ্যালাক্সির ভিতরে অবস্থান করছে। এই গ্যালাক্সির নাম ছায়াপথ (Milky Way) যার ভেতরের অনেক গ্রহ আর উপগ্রহের মধ্যে আমাদের এই পৃথিবী একটি। সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটছে তাতে কোন সৃষ্টিকর্তার কৃতিত্ব বিজ্ঞানীরা খুজে পায়নি যার অর্থ দাঁড়ায় এসব একা একা চলছে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে না।

এই মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটি গ্যালাক্সি হচ্ছে আমাদের এই সৌরজগৎ যাতে অবস্থান করছে আমাদের বাসগৃহ পৃথিবী। এই পৃথিবীও তার কিছু নিজস্ব প্রকৃতি নিয়ে চলছে শুরু থেকে। একটা সময় এই পৃথিবীতে এক কোষী প্রাণের উৎপত্তি হয়। যাদের মধ্যে দুইটি ভাগ হয়। একটি চলমান হয়ে যায় এবং আরো কয়েকটি কোষের সাথে মিলে খাদ্য সংগ্রহ করতে থাকে। একটি কোষের গায়ে লেগে থাকা আরেকটি কোষ তার থেকে খাদ্য গ্রহন করে বেচে থাকার চেষ্টা করে। এরা ধীরে ধীরে একস্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করা শেখে। আজকের পৃথিবীর প্রানী জগৎ এর মধ্যে সমস্ত পশু, পাখি, পোকা-মাকড়, জীব-জন্তু সহ এই পর্যন্ত পৃথিবীতে আবিষ্কার হওয়া ৫৫ লক্ষ প্রাণের মধ্যে আমরা যাদের দেখতে পায় তারা হচ্ছে এই বহুকোষী গোত্র থেকে বিবর্তিত হয়েছিলো। আর সেই শুরুতে যে কোষগুলি একা একাই বেচেঁ থাকার জন্য যুদ্ধ করে গিয়েছিলো একই যায়গায় অবস্থান করে। যারা সূর্যের আলোর থেকে খাবার সংগ্রহ করা শিখেছিলো তারা কোটি কোটি বছরে বিবর্তিত হয়ে আজকের উদ্ভীদ জগৎ হয়েছে। অর্থাৎ আজকের পৃথিবীর সকল গাছ-পালা, লতাপাতা হচ্ছে তারা। বিবর্তনবাদের প্রাণের উৎস পড়লে এসব পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। এখানে শুধুই ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি।
পৃথিবীতে সেই শুরু থেকে এই প্রাণের উৎপত্তিতে কোন সৃষ্টিকর্তার হাত আছে কিনা বা এখন যেভাবে বিবর্তনের চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে তাতে কারো হাত আছে কিনা সেটা কোন বিজ্ঞানী এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ এসব প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মেই চলছে। এখন বর্তমানে কেউ যদি দাবী করে থাকে এসব কেউ একজন নিয়ন্ত্রণ করছে তাহলে সেই কেউ একজনের সৃষ্টি মানুষের মস্তিষ্কে কিভাবে হয়েছে বা এমন ধারণা তারা কেনো করছে তার একটু অনুসন্ধান করা যেতে পারে। সঠিক অনুসন্ধানে পাওয়া যাবে তার উওর। এই পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাবের কয়েকশো কোটি বছর পরে আজ থেকে প্রায় ৩ কোটি বছর আগে মানুষের পুর্বপুরুষ একজাতীয় প্রাইমেট এর অস্তিত্ব তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু পৃথিবীর কোন অঞ্চলে বা কোথায় আসলে এই প্রাইমেটরা প্রথম অবস্থান করছিলো তা নিশ্চিত ভাবে কেউ ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো মিউজিয়াম অফ সায়েন্স-এর গবেষণা সহযোগী মাইকেল হেডস একটি গবেষণাপত্রে প্রাইমেটদের উৎপত্তির সময়কাল ও স্থান সম্পর্কে একটি নতুন ধারণা ব্যক্ত করেছেন।
এই প্রাইমেট বা একজাতীয় এপ থেকেই ৩ কোটি বছরের ব্যাবধানে বেশ কিছু গোত্র এসে যায় যেমন ধরুন ১০টি শাখার মধ্যে একটি হচ্ছে বানর, একটি ওরাং-ওটাং, একটি সিম্পাঞ্জী, একটি বনমানুষ বা গোরিলা, আর একটি হয়েছিল অস্ট্রালোপিথেকাস গোত্র। মানুষ বা মানব বলতে আমরা যা বুঝি তারা হচ্ছে “হোমো” গোত্রের মধ্যে পড়ছে আর এই হোমো গোত্র এসেছিলো এই অস্ট্রালোপিথেকাস গোত্র থেকে। প্রাইমেট বা এপ এর থেকে ২.৭৫ কোটি বছর পরে অর্থাৎ আজ থেকে আনুমানিক ২৩ লক্ষ থেকে ২৪ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকাতে “হোমো” অস্ট্রালোপিথেকাস গণ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। হোমো গণের অনেক প্রজাতিরই উদ্ভব ঘটেছিল যদিও একমাত্র মানুষ ছাড়া তাদের সবাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হোমিনিড, হোমো-ইরেকটাস, হোমো-হ্যাবিলিশ, হোমো-নেয়ান্ডারথাল এ ধরণের বিলুপ্ত মানব প্রজাতি। এদের মধ্যে রয়েছে হোমো ইরেক্টাস যারা এশিয়ায় বাস করতো এবং হোমো নিয়ানডার্টালেনসিস যারা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। শুধু টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিলো হোমোস্যাপিয়েন্সরা। আজকের আধুনিক মানুষ অর্থাৎ আমরা যারা নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় দেয় এরা যে একরাতে ঘুম থেকে উঠেই দেখলো তারা মানুষের মতো হয়ে গিয়েছে বা তাদের কেউ কাদা মাটি দিয়ে তৈরি করে রোদে শুকিয়ে ফু দিয়ে প্রাণ দান করেছে তা কিন্তু না। সেই বাকী থাকা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে হোমোস্যাপিয়েন্সরা পৃথিবীর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেছে এবং টিকে থেকেছে যার কারণে আজকের আপনি আমি আজ এখানে। এই হোমোস্যাপিয়েন্সরা সভ্য হয়েছে খুব বেশিদিন আগে না। মানব সভ্যতার ইতিহাস আজ পর্যন্ত মানুষ যতটুকু আবিষ্কার করতে পেরেছে তা হচ্ছে ৪০ হাজার বছর আগের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া হোমো-নেয়ান্ডারথাল গোত্রের ইতিহাস। তারা সভ্য ছিলো কি ছিলো না এটার পক্ষে যতটুকু প্রমান পাওয়া যায় তা হচ্ছে এরাই প্রথম তাদের মৃত দেহ সমাধি করেছিলো। কিন্তু পরবর্তিতে তারা সবাই বিলুপ্ত হয়ে যায় টিকে থাকে শুধুই হোমোস্যাপিয়েন্স।
এই হোমোস্যাপিয়েন্সদের সভ্যতাকে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছিলেন আমাদের বোঝার সুবিধার্থে তা হচ্ছে, প্রাচীন যুগ, মেসোপটেমিয়া এবং সুমেরীয় জাতি, আধুনিক যুগ (প্রাথমিক পর্ব), আধুনিক যুগ (সাম্প্রতিক পর্ব), সমসাময়িক যুগ (বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ), সমসাময়িক যুগ (বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ), সমসাময়িক যুগ (একবিংশ শতাব্দী), এর মধ্যে প্রাচীন যুগেরও বেশ কিছু ভাগ আছে যেমন, প্রস্তরযুগ, লৌহ যুগ, তাম্র যুগ, কৃষি যুগ এসবই মানুষের সভ্য হবার ইতিহাস বলে আমাদের। কৃষি বিপ্লবের (খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০-খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ) এর মধ্যে সূচনা ঘটে। নব্যপ্রস্তর যুগের বিপ্লবে উদ্ভিদ ও পশুর গৃহপালন এবং নিয়মানুগ কৃষিপদ্ধতি রপ্ত করা মানব সভ্যতার একটি অনন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটা হচ্ছে মানুষের যাযবর জীবন যাপণ ত্যাগ করে স্থায়ী বসবাসের কথা বলে। কৃষির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শস্য উৎপাদন ব্যবস্থারও বিকাশ ঘটে, যা সমাজে শ্রমবিভাগকে ত্বরান্বিত করে। শ্রমবিভাগের পথ ধরে সমাজে সুবিধাপ্রাপ্ত উচ্চশ্রেণীর উন্মেষ ঘটে ও শহরগুলো গড়ে উঠে যা মানব সভ্যতার প্রথম সভ্যতা বলে পরিচিত। সমাজে জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লিখন ও হিসাব পদ্ধতির ব্যবহার জরুরী হয়ে পড়ে। হ্রদ ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে অনেক শহর গড়ে উঠে। এদের মধ্যে উন্নতি ও উৎকর্ষতার দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা, মিশরের নীল নদ তীরবর্তী সভ্যতা (প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা) ও সিন্ধু সভ্যতা উল্লেখ্যযোগ্য। একই ধরনের সভ্যতা সম্ভবত চিনের প্রধান নদীগুলোর তীরেও গড়ে উঠেছিল কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি।

যতদুর আমরা জানতে পারি তাতে বোঝা যায় এই হোমোস্যাপিয়েন্স বা মানব জাতি আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে সভ্য জাতির পরিচয় পেয়েছে। তবে সভ্যতার শুরুতেই মানুষ এই ঈশ্বর নামক একটি কল্পিত চরিত্র তৈরি করেছিলো যা মানব সভ্যতার সমাজে ঢুকে গিয়েছিলো। এই যে আজকের দিনের একজন বিশ্বাসী বা সংশয়বাদী বা আজ্ঞেয়বাদীর এই প্রশ্ন, এরকম প্রশ্নের উত্তরেই তখনকার সময়ে এই কল্পিত ঈশ্বর চরিত্রটির সৃষ্টি করেছিলো মানুষেই। তথ্য প্রমাণের উপরে নির্ভর করে এটা কিন্তু বর্তমানে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব। সেই সময়ে মানুষের জ্ঞান যতটুকু বিকোশিত হয়েছিলো তারা যতটুকু পর্যবেক্ষন করে জানতে পেরেছিলো যার উত্তর দেবার মতো ক্ষমতা মানুষের ছিলো সেগুলো বাদে সকল প্রাকৃতিক ঘটনাই তারা ঈশ্বর করছে বা ঈশ্বরের নামের একটি চরিত্রের উপরে চাপিয়ে দিয়ে কিছুটা মুক্তি পাচ্ছে দেখে একজন কল্পিত ঈশ্বরের আগমন ঘটলো মানব সভ্যতায়। মানুষ একটা সময় জানতো না আকাশে বজ্রপাত বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধি হবার কারণে হয় তাই তারা প্রচার করতে শুরু করলো এটা ঈশ্বর করে বা এটা ফেরেশতাদের শয়তানের উপরে তীর নিক্ষেপ। মানুষ একটা সময় জানতো না বৃষ্টি কেনো হয়, জানতো না রাত কেন হয়, দিন কেন হয়, মানুষের জন্ম কিভাবে হয়, মানুষ কিভাবে আসলো পৃথিবীতে, সুর্য কি, চাঁদ কি, সুমদ্র কিভাবে সৃষ্টি হলো, এসব একই নিয়মে কিভাবে চলছে ? এরকম নানান প্রশ্ন মানুষের মনে তৈরি হতে থাকে। মানুষ যতটুকু পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে জানতে সক্ষম হয় ততটুকু ব্যাখ্যা করে আর যতটুকু সে জানতে পারেনা যার কারণে সে লজ্জা, হতাশা আর না জানার অজ্ঞতা থেকেই তৈরি করে ফেলে ঈশ্বর নামের একটি চরিত্র। এবং প্রচার করতে থাকে ঈশ্বর এসবের স্রষ্টা তিনিই এইসব সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই এসব নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
আসলে কিন্তু বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ব্যাবহার করে মানুষ এই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম। সদ্য স্থাপন করা বাংলাদেশের যে স্যাটেলাইট সেই রকম স্যাটেলাইট দিয়ে পৃথিবীর আগাম আবহাওয়া বার্তা বা সতর্ক সংকেত মানুষ পাচ্ছে। কৃত্রিম মেঘ সৃষ্টি করে বৃষ্টিও ঝরাতে পারে মানুষ। বিজ্ঞানীরা এসব প্রাকৃতিক নিয়ম নিজেদের আয়ত্তে করতে গিয়ে এমন কারো সাথে সাক্ষাত করার সুযোগ পায়নি যে এসব সৃষ্টি করেছে বা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে দাবী করেছে। প্রকৃতিকে মানুষ নিয়ন্ত্রন করছে সেই প্রকৃতিকে ব্যাবহার করেই। আগে মানুষ প্রকৃতির আসল নিয়ম জানছে এবং পরে একই নিয়মে তা গঠন করছে এবং মানব সভ্যতার জন্য ব্যাবহার উপযোগী করে তুলছে। শুধু যে পৃথিবীর প্রকৃতি থেকে মানুষ উপকারিতা নিচ্ছে তা নয় সৌরশক্তির ব্যাবহারও মানুষ করছে। এসব করতে গিয়ে তারা কোন নিয়ন্ত্রক বা কেউ একজন এসব নিয়ন্ত্রণ করছে এমন কারো সন্ধান পাচ্ছে না। তাই বলা যায় এসব কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে না। সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই এসব পরিচালিত হয়ে আসছে।
মৃত কালপুরুষ
২৩/০৫/২০১৮

No comments:

Post a Comment