Wednesday, May 23, 2018

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের অবস্থান ও আগামীর অন্ধকার!

আমি এমন একটি সময়ে বসে লিখছি যখন চারিদিকে ভাইরাস আক্রান্ত মানুষ দেখতে পাই। এরা নিজেদের দেহ উড়িয়ে দিচ্ছেমানুষের গায়ে কিংবা ভীড়ের মধ্যে বোমা ছুড়ে মারছেট্রাক তুলে দিচ্ছে, “আল্লাহু আকবার” বলে বন্দুক নিয়ে হামলে পড়ছে।
এমন যখন অবস্থা তখন দূর প্রবাসে বসেও শান্তি পাচ্ছি না। সব সময়ই আতংকে থাকি। চারিদিকে ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। বিদেশ বলে কিএই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে সময় লাগে না।
আমি যে ভাইরাসের কথা বলছি তার নাম ধর্ম ভাইরাস। আল্লাহর প্রতি ভয় ভাইরাস। সেদিন আমি ভাবছিলামকুর-আনে যত স্থানে বলা হয়েছে, “আর তোমরা ভয় করতে থাকো আল্লাহকে” এর স্থানে যদি লিখে দিতে পারতাম “আর তোমরা ভালোবাসতে থাকো আল্লাহকে”! তাহলে পৃথিবীময় এত অনর্থ হয়ত থামানো যেত। ঈশ্বর কিংবা আল্লাহ যিনি মানুষের স্রষ্টা তাঁকে ভয় পেতে হবে কেনতিনি তো কোন ইভিল কিংবা রাক্ষস নন। তিনি সেই স্বত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের মত এত অদ্ভুত একটি প্রাণীকে। দিয়েছেন জ্ঞান বুদ্ধি ও বিবেক। মানুষ কেন তাঁকে ভয় পাবে?
যাহোকভয় থেকেই উৎপত্তি হয় ঘৃণার। ভয় করতে থাকতে থাকতে মানুষের ভেতরে জন্ম নেয় বিশ্বাসের ভাইরাস। এখানে একটি কাহিনী তুলে ধরা দরকার। আমি যখন দেশে ছিলামমোহাম্মদপুরে আমাদের বাসা ছিল। যে গলিটার ভেতরে আমাদের বাসা সেখানে একজন অতি-সাধারণ দেখতে হুজুর বাস করতেন। তিনি একটি বাড়ির কেয়ার টেকার। সেই বাড়ির আসে পাশ দিয়ে যাবার সময় তাঁকে চিৎকার করে দোয়া পড়তে দেখতামঅথবা জোড়ে সাউন্ড দিয়ে সে ওয়াজ শুনতো। আমার স্ত্রীকে সে কয়েকবার রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মাথায় কাপড় দিতে বলেছে। একদিন চায়ের দোকানে চার অর্ডার দিলো বুড়ো লোকটা। একজন লোক এসে বলল, “শুভ নববর্ষ”। শুনেই উনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন! সে বলল, “কোন হাদীসে পহেলা বৈশাখের কথা আছে”?
লোকটি একেবারেই ভেবাচেকা খাইলেন নাকিংবা অপ্রস্তুত হলেন না। সোজা বললেন, “কোন হাদীসে চা খাওয়ার কথা আছে”? “কোন হাদীসে ইলিশ মাছ খাওয়ার কথা আছে”? “আপনি চাও খাচ্ছেনইলিশও খাচ্ছেনআমি নববর্ষ পালন করলে সমস্যা কি”?
আমি নিজেও কখনও এমন চমকপ্রদ উত্তরের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সে হুজুর সাথে সাথে উত্তর দিতে পারল না। তারপর আর কথা না পেয়ে সে বলল, “নাস্তিকের দল তোরা সব জাহান্নামী হবি”।
আমি অবাক হই সবার কান্ড দেখে। কেউ এই মানসিক বিকলাঙ্গতাকে লক্ষ্য করছে না। এটা তো মানসিক অসুস্থতা! এত গুলো মানুষ নিজেকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলো কিভাবেকুরআন কিংবা হাদীসের আবির্ভাব কি সেদিন হয়েছেআকবরশাহজাহানের আমলেও তো কুরআন ছিলকই তখন তো কেউ আত্মঘাতি হয় নাই! তাহলে আজকে কেন হচ্ছে!
এর উত্তর কি কেউ খোঁজার চেষ্টা করেছেনমুসলমানদের মধ্যে একটা বিশেষ গোষ্ঠি আছে যারা মনে করে যে দুনিয়াময় ইসলাম কায়েম করতেই মুসলমানদের আবির্ভাব হয়েছে। সবাইকে মুসলমান না বানানো পর্যন্ত তাদের এই মিশন চলতেই থাকবে। অথবা এদেরকে কেউ এভাবে ভাবতে শেখাচ্ছে। কিন্তু কারা এমন করছেকেনই বা করছেকি তাদের স্বার্থ?
এই বিশেষ গোষ্ঠি থেকেই জঙ্গীদের উতপত্তি। কিন্তু এতে কোন সমস্যা ছিল না। গুটি কতক জঙ্গী মরুকতাতে কার কিসমস্যা হলো এদের পেছনে প্রচ্ছন্নভাবে বা পরোক্ষভাবে সাধারণ মুসলমানরা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মুসলমানদের অনেকেই আদর্শগতভাবে এই জঙ্গীদের সাথে একাত্ম। যখন কোন জঙ্গী আক্রমণ হয় সাধারণ মুসলমানরা প্রথমে “এরা সহীহ মুসলমান নয় বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করবে”। আবার বলবে, “কুর-আন অর্থসহ পড়লে কেউ জঙ্গী হতে পারে না!”
কিন্তু আদর্শগত দিক থেকে চিন্তা করে দেখেন!
নারীর কোন অধিকারের বেলায় এই দুই গোষ্ঠি এক মনোভাব পোষণ করে। এদের কাছে “মালালা” একজন শয়তান নারীকিংবা ঝালোকাঠির “শারমিন আক্তার” আমেরিকার দালাল!
বিধর্মীদের অধিকারের ব্যাপারে জঙ্গীদের সাথে সাধারণ মুসলমানদের অনেক মিল। এরা মনে করে বিধর্মী মানেই কাফেরআর কাফের মানেই অমানুষ! এদের জিজিয়া দিতে হবে নাহলে দেশে থাকতে পারবে না!
পাশ্চাত্য বিরোধ! জঙ্গীগোষ্ঠি কিংবা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মনে করেন পাশ্চাত্য দেশগুলো নাকি নোংরামীতে পরিপূর্ণ! সেসব দেশে নাকি যা খুশি তাই হয়আর এখন নাকি সব্বাই এসব থেকে বাঁচার জন্য দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছে!
দুই দলই বিশ্বাস করে কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না। এবং একদল এই দাবী সামনে রেখে বোমাবাজি করবেআর আরেকদল ঠিক এই জিনিসটাকে পেছন থেকে সাপোর্ট করতে থাকবে। মনে রাখা খুব জরুরী এই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাই হিংস্র জানোয়ারে পরিণত হতে পারে। রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলানাসির-নগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাংচুর,পূজার সময় মন্ডপ ভেঙ্গে দেওয়াপ্রতিমা ভাংচুরের সময় সেসব প্রতিয়মান হয়!
এবং পরবর্তী জঙ্গী কিন্তু ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পরিবার থেকেই জন্ম নিবে। 
ইসলামের আবির্ভাব যদি রক্ত দিয়ে না হততাহলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য হয়তো এরা এমন সশস্ত্র পথ বেছে নিতো না। আজকের এই যুগে কিছুই আর চাপা থাকে না। আগেকার দিনে হয়ত জানার সোর্স অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন সোর্স অনেক বেশি। হাদীস কুর-আন সার্চ করা কোন বিষয়ই না। তাই মানুষ অনেক বেশি ধর্মকে জানতে পারছে। আর এই জানার জন্যই একদল জঙ্গী হচ্ছে আরেকদল তাদের সমর্থন করছে।
দেশে থাকতে আমি নামাজ পড়তে মসজিদে গেছি। একদিন খেয়াল করলামমসজিদের ভেতরে ওয়ালের মধ্যে তাক করে রাখা হয়েছে বই। হাদীসের তাফসীরকুর-আনের বাংলা অর্থ ইত্যাদি নানান ধর্মীয় বই। আমার মনে হলো মসজিদ তো একটা পাঠাগারও হতে পারে!ইমাম সাহেবকে গিয়ে বললামআমি মসজিদে বই দিতে চাই। শুনে ইমাম সাহেব খুশি হলেন। বললেন,”ভালো ভালোআমাদের মসজিদে নামাজ পড়তে এসে মানুষ যদি ধর্মের বিষয়ে কিছু শিখতে পারে!
আমি বললাম, “আমি ধর্ম বিষয়ে বই দিবো নাধর্মের বই তো আপনাদের এখানে আছেইআমি বিজ্ঞানের বই দিবোআমি অনেক নামীগুণী লেখকের বই দিবো!”
আমার কথা শুনে ইমাম সাহেবের মুখ কেমন পাংশুটে হয়ে গেল। তিনি বললেনমসজিদে অন্য কোন ধরণের বই আমরা এলাও করি না। আমার বিশ্বাস এমনটা ৮০ ভাগ মুসলমানই ভাবে। অর্থাৎ এরা শিক্ষাকেও অস্বীকার করে।
তবু আশার কথা হচ্ছেআসিফ মহিউদ্দিনের লেখায় এখন হাজারের উপরে লাইক পড়ে। ভালো কমেন্টও পড়ে। অনেক কমেন্ট পড়লে বুঝা যায় মানুষ অন্ধত্বের গন্ডি থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে!

লেখক পরিচিতিঃ ইমরোজ আহমদ

No comments:

Post a Comment